পল্লী-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে,
আকাশ যাহার বনের শীষে দিক-হারা মাঠ চরণ ঘেঁষে।
দূর দেশীয়া মেঘ-কনেরা মাথায় লয়ে জলের ঝারি,
দাঁড়ায় যাহার কোলটি ঘেঁষে বিজলী-পেড়ে আঁচল নাড়ি।
বেতস কেয়ার মাথায় যেথায় ডাহুক ডাকে বনের ছায়ায়,
পল্লী-দুলাল ভাইগো আমার, যাব আমি যাব সেথায়।
তোমার দেশে যাব আমি, দিঘল বাঁকা পন্থখানি,
ধান কাউনের খেতের ভেতর সরু সূতোর আঁচল টানি;
গিয়াছে হে হাবা মেয়ের এলোমাথার সিঁথীর মত
কোথাও সিধে, কোথায় বাঁকা, গরুর পায়ের রেখায় ক্ষত;
গাজনতলির মাঠ পেরিয়ে, শিমূলতলীর বনের বাঁয়ে,
কোথাও গায়ে রোদ মাখিয়া, ঘুম-ঘুমায়ে গাছের ছায়ে।
তাহার পরে মুঠি মুঠি ছড়িয়ে দিয়ে কদম-কলি,
কোথাও মেলে বনের লতা গ্রাম্য মেয়ে যায় যে চলি;
সে পথ দিয়ে যাব আমি পল্লী-দুলাল তোমার দেশে,
নাম-না জানা ফুলের সুবাস বাতাসেতে আসবে ভেসে।
তোমার দেশে যাব আমি, পাড়ার যত দস্যি ছেলে,
তাদের সাথে দল বাঁধিয়া হেথায় সেথায় ফিরব খেলে।
থল-দীঘিতে সাঁতার কেটে আনব তুলে রক্ত-কমল,
শাপলা লতায় জড়িয়ে চরণ ঢেউ এর সাথে খাব যে দোল।
হিজল ঝরা জলের সাথে গায়ের বরণ রঙিন হবে,
দীঘির জলে খেলবে লহর মোদের লীলাকালোসবে।
তোমার দেশে যাব আমি পল্লী-দুলাল ভাইগো সোনার,
সেথায় পথে ফেলতে চরণ লাগবে পরশ এই মাটি-মার!
ডাকব সেথা পাখির ডাকে, ভাব করিব শাখীর সনে,
অজান ফুলের রূপ দেখিয়া মানব তারে বিয়ের কনে;
চলতে পথে ময়না কাঁটায় উত্তরীয় জড়িয়ে যাবে,
অঢেল মাটির হোঁচট লেগে আঁচল হতে ফুল ছড়াবে।
পল্লী-দুলাল, যাব আমি-যাব আমি তোমার দেশে,
তোমার কাঁধে হাত রাখিয়া-ফিরবো মোরা উদাস বেশে।
বনের পাতার ফাঁকে ফাঁকে দেখব মোরা সাঁঝ বাগানে,
ফুল ফুটেছে হাজার রঙের মেঘ তুলিকার নিখুঁত টানে।
গাছের শাখা দুলিয়ে আমি পাড়ব সে ফুল মনের আশে,
উত্তরীয় ছড়িয়ে তুমি দাঁড়িয়ে থেকো বনের পাশে।
যে ঘাটেতে ভরবে কলস গাঁয়ের বিভোল পল্লীবালা,
সেই ঘাটেরি এক ধারেতে আসবো রেখে ফুলের মালা;
দীঘির জলে ঘট বুড়াতে পথে পাওয়া মালাখানি,
কুড়িয়ে নিয়ে ভাববে ইহা রাখিয়া গেছে কেউ না জানি।
চেনে না তার হাতের মালা হয়তবা সে পরবে গলে,
আমরা দুজন থাকব বসে ঢেউ দোলা সেই দীঘির কোলে।
চার পাশেতে বনের সারি এলিয়ে শাখার কুন্তল-ভার,
দীঘির জলে ঢেউ গণিবে ফুল শুঁকিবে পদ্ম-পাতার।
বনের মাঝে ডাকবে ডাহুক, ফিরবে ঘুুঘু আপন বাসে,
দিনের পিদিম ঢুলবে ঘুমে রাত-জাগা কোন্ ফুলের বাসে।
চার ধারেতে বন জুড়িয়া রাতের আঁধার বাঁধবে বেড়া,
সেই কুহেলীর কালো কারায় দীঘির জলও পড়বে ঘেরা।
সেই আঁধারে পাখায় ধরে চামচিকারা উচ্চে উঠি,
দিকে দিকে দিগনে-রে ছড়িয়ে দেবে মুঠি মুঠি।
তখন সেথা থাকবে না কেউ, সুদূর বনের গহন কোণে,
কানাকুয়া ডাকবে শুধু পহরের পর পহর গণে।
সেই নিরালার বুকটি চিরে পল্লী দুলাল আমরা দুজন,
পল্লীমায়ের রূপটি যে কি, করব মোরা তার অন্বেষণ।
যাব আমি তোমার দেশে
Did you enjoy the the artible “যাব আমি তোমার দেশে” from Jasimuddin on OZOFE.COM? Do you know anyone who could enjoy it as much as you do? If so, don't hesitate to share this post to them and your other beloved ones.
Leave a Reply