খোকা,
একবার একটু আসবি বাবা?
তোকে দেখতে ইচ্ছে করে।
কতোদিন দেখিনি তোকে
একটু দেখতে ইচ্ছে করে।
গেলো শ্রাবনে চার বছর।
আমাকে তোর
একটুও মনে পড়ে না রে?
মনে পড়ে না-
আমার হাতে রান্না
আমার বুকে দস্যিপনা?
বুকটা বড় শূন্য লাগে।
ঘরটা যেন ছম ছম
বুকটা কেমন ফঙ ফঙ
মনটা কেমন ভারী ভারী
দেহটা কেমন পাথর পাথর।
খোকা,
আমাকে তোর
একটুও মনে পড়ে না রে?
বড় একা লাগে রে
বড় একা।
শূন্য ঘর,
শূন্য হৃদয়, শূন্য জীবন।
এতো শূন্যতা নিয়ে
কখনো কি বাঁচা যায় রে?
আয় না,
আয় না একবার
আমার বুকে ফিরে।
মরণকালে ভীমরতি আমার।
তোকে দেখতে ইচ্ছে করে!
একবার,
আবার একবার তোকে
কোলে বসিয়ে
‘মা’ ডাক শুনতে ইচ্ছে করে।
ভাদর মাসে জনম তোর
শুক্লা দ্বাদশীর শুভ দিনে।
তোর তরে
এবারেও পায়েস বানিয়েছি।
মায়ের মন কি মানে?
এলি না, তুই এলি না।
তোর ছবিকেই খাইয়েছি
খাওয়াতে খাওয়াতে খুব কেঁদেছি।
কাঁদবো না?
বলি- কাঁদবো না?
তুই চাইলে, না আসতে পারিস
কিন্তু আমার খোকা ডাক
তা তো তুই কেড়ে নিতে পারবি না!
মায়ের স্নেহ খোকা, মায়ের স্নেহ
মরণও তা কেড়ে নিতে পারে না।
এমন কেন হয় খোকা?
কেন ভালোবাসলে,
লুকিয়ে লুকিয়ে কাঁদতে হয়
কেন বুকে ধরলে,
এতো হাহাকার করতে হয়
কেন গর্ভে ধরলে,
শূণ্যতার গর্ভে বাঁচতে হয়?
মায়েরা কি শুধু
কাঁদতেই জন্মেছে খোকা?
মরণ হোক,
মরণ হোক পোড়ামুখী মায়েদের!
মরতে তো চাই খোকা,
তবুও মরতে আমি পারি না!
বাঁচতে আমি পারি না
মরতেও আমি পারি না।
বাঁচা-মরার মাঝে,
ত্রিশঙ্কু হয়ে ঝুলছি।
সন্তান আছে, মা ডাক নেই।
আগ্রহী বুক আছে, সন্তান নেই।
থালা জুড়ে পায়েস আছে
দস্যি ছেলেটা নেই।
মরেই যাবো
ভেবেছিলাম মরেই যাবো।
চলেও গেছিলাম-
খোয়াই নদীর ব্রিজে।
তখনই তোর বাবার
খুকখুকে গলার,
শেষ আর্তিটা ভেসে এলো-
‘জাহ্নবী, আমি গেলাম।
দেখো। তুমি খোকাকে দেখো।’
যন্ত্রণা যন্ত্রণা যন্ত্রণা!
মরতে আমি পারি না
বাঁচতেও আমি পারি না।
খোকা, একটু আসবি বাবা?
তোকে দেখতে ইচ্ছে করে।
কতোদিন দেখিনি তোকে
তোকে দেখতে ইচ্ছে করে।
© অরুণ মাজী
Painting: Pompeo Batoni
You May Also Like:
- You Are Just A Dream
- ঈশ্বরের ক জন শয্যা সঙ্গিনী? (On God And Belief)
- পাগলপনা এক জীবনদায়ী ওষুধ (Human Suffering)
- Man Cannot Live Without Madness
- আমারই কাপুরুষতায় (Amari-I Kapurushotay)
- আমি চাই রমণী দাঁতের দংশন (Ami Chai Romoni Danter Dongshon)
- আমি ভালো নেই (দ্বিতীয় খন্ড) (Ami Bhalo Nei – 2)
- নারী স্পর্শ (Nari Sporsho)
Leave a Reply