ধর্ম কি? কেউ ভাবে নরহত্যাই ধর্ম। কেউ ভাবে নর-রক্ষাই ধর্ম। বিভিন্ন মানুষের কাছে এদের রূপ ভিন্ন কেন? মানুষের এই বোধের তারতম্য পৃথিবীকে যেমন সুন্দর করতে পারে, তেমনি পৃথিবীতে রক্তের স্রোতও আনতে পারে। কেন ধর্মের নামে আজ এতো যন্ত্রণা?
ধর্মের সঙ্গে মানুষের আবেগ ভীষণ ভাবে জড়িত। তাই ধর্ম নিয়ে লেখা বিপজ্জনক। গালি খেতে হয়। হুমকি শুনতে হয়। আমি ন্যাংটো, তাই লিখেই ফেলি।
ধর্ম হলো প্রাকৃতিক কিছু নিয়ম, জীবনের কিছু মৌলিক দর্শন।
উপরে উঠিবে যাহা
পতিত হইবে তাহা।
এ হলো- প্রাকৃতিক নিয়ম। এর অন্তর্নিহিত দর্শন কি? অহঙ্কারী হইও না, কারন- সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব কিছু বদলে যাবেই। ‘আজকে যে রাজাধিরাজ, কালকে ভিক্ষার ঝুলি নেয়’। সব কিছুই চঞ্চল।
এই দর্শনকে, বিভিন্ন ধর্ম গ্রন্থে বিভিন্ন ‘আচার’ হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ধরো, উপরের দর্শনকে বাস্তবে প্রয়োগ করতে, কোন ধর্মগ্রন্থ লিখলো- বিনয়ী হও। ধৈর্য্য ধরো। বড়দের সন্মান করো। ছোটদের ভালোবাসো। দান করো। ইত্যাদি।
দর্শন শাশ্বত। তার পরিবর্তন হয় না। কিন্তু আচার- ধর্ম এবং সংস্কৃতি অনুযায়ী পরিবর্তিত হয়।
তার উপর রয়েছে বিষফোঁড়া। সেটা কি? যেহেতু ধর্মের সঙ্গে মানুষের আবেগ ভয়ঙ্করভাবে জড়িত। সেহেতু ধর্মকে, ক্ষমতাশালী কিছু শয়তান- শাসন যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। ধরো, তারা ধর্ম গ্রন্থের মধ্যে, কিছু আচার ঢুকিয়ে দিলো- যা দর্শনের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বা ধর্মের ভ্রষ্টাচার। সাধারণ আবেগ তাড়িত মানুষ তা বুঝলো না। যেমন প্রাচীনকালে, খ্রিস্টান ধর্মে প্রথা ছিলো- কোন নারী সতী কিনা, তা পরীক্ষা করা হবে। কি ভাবে?
তাকে, মাঝ সমুদ্রে হাত পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হবে। যদি সে ডুবে যায়- সে সতী। যদি না ডুবে, তা হলে সে অসতী। তখন গ্রামের মানুষ তাকে, ইঁট ছুঁড়ে হত্যা করবে। ক্ষমতাশালী শয়তানদের লক্ষ্য কি? সেই নারীকে হত্যা করা হবেই। কেন? নারীদের মনে ত্রাস সৃষ্টি করে রাখা, যাতে তারা পুরুষের দাসী হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
দুর্ভাগ্যবশতঃ ধর্মের আচারকেই মানুষ ধর্ম ভাবতে শিখেছে। আর সে কারনেই ‘আঁধারে ঢাকা এ পৃথিবী’। সে কারনেই ‘রক্ত বহে এ ভুবনে, স্রোতের প্রায়’।
ধর্মের আচার বা তার সারমর্মের ব্যাখ্যাকে আবার, ধর্মগ্রন্থে- শ্লোক বা কবিতার আকারে লেখা হয়েছে। তোমরা যারা কবিতা পড়ো, তারা জানো- একই কবিতা তুমি ভিন্ন সময়ে পড়লে, তার অর্থ ভিন্ন মনে হয়। কাজেই একই কবিতা যদি ‘ভিন্ন জনে’ পড়ে, তাহলে তার অর্থ আরও কতটা বেশি ভিন্ন হবে? কাজেই সেই সব গ্রন্থের অপব্যাখ্যা প্রতিনিয়ত ঘটে। এমনকি পন্ডিতরাও সেই ব্যাখ্যা নিয়ে নিজেদের মধ্যে লড়াই করে। কাজেই সাধারণ মানুষের অবস্থা কি হবে, তা সহজেই বুঝতে পারছো।
এতদিনে আমি প্রায় হাজার সাতেক কবিতা লিখেছি। কোন কোন লাইন আমি লিখি- যার অনেক অর্থ হয়। কাজেই ধর্ম গ্রন্থ যিনি লিখেছেন- তিনিও তাই করেছেন। কাজেই সেই সব গ্রন্থের যে ভিন্ন অর্থ হবে, তা তো অনিবার্য।
তোমরা যারা ধার্মিক হতে চাও- তোমরা ধর্মের দর্শন বোঝার চেষ্টা করো। তাহলে দেখবে- সেই ধর্মকথা, কেবল প্রকৃতির নিয়মের কথা বলছে। যেহেতু প্রকৃতির নিয়ম সবার জন্য একই। তাই দেখবে- সব ধর্মই (প্রকৃত ধর্ম) আসলে এক।
আমার ইংরেজী কবিতার বই ‘SONG OF THE SOUL’- এ আমি লিখেছিলাম-
O God
you offered me two choices.
One was –
to be YOUR FOLLOWER
and walk your path.
And another was-
to be ME
and follow my own path.
–
I tried both
and found them merge together
to a common path called LOVE.
আমি দুটো পথেই হেঁটেছি- ধর্মের তত্ত্বের পথে। আর আমার নিজের সাধারণ জ্ঞানের পথে। দেখলাম- দুটো পথই কিছু দূরে একসঙ্গে মিশে গিয়ে নাম হয়েছে- ‘প্রেমের পথ’।
তোমরা জানো, আমি বারবার তোমাদেরকে বলি- ভালো মন্দের বিচার মানুষ করতে গেলে বারবার সে ভুল করবে। কারন-
‘তুমি যারে আলো বলো
অন্যে বলে কালো। ‘
সুভাষ বসুকে আমি বলি- ‘আমার ঈশ্বর’, অথচ ইংরেজরা তাকে বলে উগ্রবাদী। কাজেই ভালো মন্দের বিচার- মানুষের ক্ষমতার বাইরে। তাই মানুষ কোনদিন ভালো মন্দের বিচার করে এ পৃথিবীকে সুন্দর করতে পারবে না। ঈশ্বর তাই মানুষকে, অনেক সহজ পথ দিয়েছেন, যেখানে তর্ক নেই, লড়াই নেই, রক্তপাত নেই। তা হলো- প্রেমের পথ।
এজন্যই আমি মালবিকাকে বলি-
‘তোমার মিঠে বুক ঘষে ঘষে
বুকে একটু প্রেম ভরে দাও।’
© অরুণ মাজী
You May Also Like:
- You Are Just A Dream
- ঈশ্বরের ক জন শয্যা সঙ্গিনী? (On God And Belief)
- পাগলপনা এক জীবনদায়ী ওষুধ (Human Suffering)
- Man Cannot Live Without Madness
- আমারই কাপুরুষতায় (Amari-I Kapurushotay)
- আমি চাই রমণী দাঁতের দংশন (Ami Chai Romoni Danter Dongshon)
- আমি ভালো নেই (দ্বিতীয় খন্ড) (Ami Bhalo Nei – 2)
- নারী স্পর্শ (Nari Sporsho)
Leave a Reply