মুচকুন্দদার বিয়ে হয়ে গেল ।
আমাদের চেয়ে দু’চার বছরের বড় ।
মুচকুন্দ সাহা । সবাই বলে মুখচুন হাবা ।
ভালো করে কথাও বলতে পারে না ।
সেই মুচকুন্দদার যে এমন সুন্দরী বউ হবে কেউ ভেবেছিল?
আমাদের বন্ধুদের বুকের ভেতরটা হু হু করে ।
মুচকুন্দবউদি কিন্তু বেশ হাসি-খুশি।
কোনও দুঃখ-টুঃখ আছে বলে মনে হয় না ।
আমার বুকের কাঠে ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে ।
মুচকুন্দবউদির বাপের বাড়ি যাকে বলে এক দিঘি-গ্রাম ।
প্রত্যেকের বাড়ির পিছনে নাকি বিরাট বিরাট দিঘি আছে ।
বউদি চিরকাল নাকি জল তোল-পাড় করে চান করে এসেছ।
এখানে সেই সুবিধে নেই
কেন না আমাদের গাঁয়ে আবার দিঘি-টিঘি কিছু নেই ।
বউদির তাই নাকি আক্ষেপের অন্ত নেই ।
মনের সুখে চান করতে পারে না ।
বেশ দূরে পশ্চিমে একটা মরা বাঁধ আছে ।
গরম কালে শুকিয়ে খট খটে হয়ে যায় ।
অন্য সময় কাদা জল । গোরু-মোষ নামে ।
মানুষ চান করতে পারে না ।
উত্তরে অবশ্য একটা ঝরনা আছে ।
পুবে একটা দহ ।
সবাই ওই দহের জলেই চান-টান করে ।
আর মেয়েরা ঝরনায় যায় ।
মুচকুন্দবউদি যখন ঝরনায় চান করতে যায় আমরা বন্ধুরা
এক ডুমুর গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকি ।
বউদি ঝরনায় চান সেরে ভিজে-কাপড়ে মাটির একটা কলসি কাঁখে
আশ্বিনের সবুজ ধান-খেতের আল ধরে ধীরে ধীরে এগিয়ে আসে ।
আমাদের বুকের ধুকপুকুনি বেড়ে যায় ।
মনে হয় ইলোরার এক প্রত্ন-পদ্মিনী যুবতী নেমে এসেছে
আশ্বিনের সোনালী ধান-খেতে ।
হাতে শুধু পদ্মটি নেই ।
বউদির ভেজা-আঁচল থেকে জল চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ে আলের ঘাসে ঘাসে ।
জলে আঁকা পথ ।
বউদি আল-পথ পার হয়ে যাওয়ার পরেই
আমাদের কোনও কোনও বন্ধু জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ।
আর কোনও কোনও তৃষ্ণার্ত বন্ধু দৌড়ে গিয়ে
বউদির আঁচল-ভেজা পথের ঘাসে মুখ ডুবিয়ে দেয় ।
আর আমার বুকটা একটা অচেনা কষ্টে মোচড় দিয়ে ওঠে ।
মনে মনে একটা জল টলটলে দিঘি হয়ে যাই;
পদ্ম-শালুক ফুটে আছে ।
চোখ বুজে দেখতে পাই আমার গভীর নীল জল সাঁতরে সাঁতরে
মুচকুন্দ বউদি পদ্ম-শালুক তুলেই চলেছে …
তুলেই চলেছে …
এই অপরূপ এই দৃশ্যটির ওপরে ঝুঁকে আছে অবাক নীল আকাশ…..
You May Also Like:
- Haiku-245 (The House Of Love Is On Fire)
- Haiku-246 ( Has It Struck Root?)
- Haiku-247 ( Biting Trend Increased.)
- Haiku-248 ( Dust-Storm Makes Me Blind)
- Haiku-249 ( Love Is Fishy)
- Haiku-250 ( Love Is Such Tree When Has Flowered)
- Haiku-251 ( I Have No Other Watch Than You)
- Haiku-252 (Hatred Rather Good)
Leave a Reply