পূর্নিমাদের আবাস ছিল টেপাখোলার গাঁয়,
একধারে তার পদ্মনদী কলকলিয়ে যায়।
তিনধারেতে উধাও হাওয়া দুলতো মাঠের কোলে,
তৃণফুলের গন্ধে কভু পড়তো ঢলে ঢলে।
সেখান দিয়ে পুর্ণিমারা ফিরতো খেলে নিতি,
বাঁকাপথে বাজতো তাদের মুখর পায়ের গীতি।
পদ্মানদীর মাঝিরে কেউ ডাকত ছড়ার সুরে,
শিশুমুখের কাকলিতে গ্রামটি যেত ভরে।
সেদিন হঠাৎ পত্র এলো বাবার থেকে তার,
পূর্ণিমারা কলকাত্তা আসবে শনিবার।
গীতা কানু সবাই খুশী, ফিসফিসিয়ে কয়,
ট্রামের গাড়ী, মোটর গাড়ী কলিকাতাময়।
গড়গড়িয়ে গড়ের মাঠে যখন তখন যাব,
ইলেকট্রিকের কল টিপিলে যা চাব তা পাব।
হাওড়া পুলের উপর দিয়ে আসব হাওয়া খেয়ে,
গঙ্গানদী করব উথল মস্ত জাহাজ বেয়ে।
এসব কথায় সবাই খুশী, তবু যাবার দিন
ঘনিয়ে যত আসছে, কোথায় বাজছে ব্যথার বীণ।
বাবলা বনের যেখানটিতে হত পুতুল বিয়ে,
পূর্ণিমা যে ঘুরে বেড়ায় সেইখানটি দিয়ে।
শিকের উপর দুলছে আজো খেলার হাঁড়িগুলি,
দাঁড়কাকটি বসে আছে সেথায় ঠোকর তুলি।
চড়ুইভাতির চুলোগুলি তেমনি আছে পড়ে,
এখানটিতে খেলবে না আর আগের মতন করে।
পোষা বিড়াল কেন যে তার সঙ্গ নাহি ছাড়ে,
যদিও বুকে পিষছে তারে স্নেহের অত্যাচারে।
* * *
* * *
পূর্ণিমারা এসেছে আজ শহর কলিকাতা,
অনেক খোঁজাখুঁজির পরে পেলেম তাদের পাতা।
শ্যামবাজারের বামধারেতে অন্ধগলির কোণে,
একতলা এক বন্ধ ঘরে থাকে অনেক জনে।
জানলা দিয়ে বয় না বাতাস, সারাটি ঘর ভরে,
ভ্যাঁপসামত গন্ধে সদাই দম আটকে ধরে।
ভাই-বোনেতে কদিন আগে জলবসন্ত হতে
ভাল হয়ে উঠেছে আজ এই তো কোনো মতে।
চোখ দুটি তার কোটরাগত, ফুলের মত মুখে
হাসির প্রদীপ জ্বলে না আর শিশুকালের সুখে।
কোথায় তাহার খেলাঘরটি, কোথায় খোলা মাঠ!
বাবলাশাখায় বাতাস যেথায় করতো ছড়া পাঠ।
বন্ধগলির অন্ধ কোণের কয়েদখানার ঘরে,
কোন্ দোষের সে বন্ধ হয় কোন্ অপরাদ করে?
কোন দস্যু করল হরণ আলো- বাতাস তার,
কে হরিল খেলার পুতুল নাচের নূপুর পার
কে হরিল ঝুমঝুমি তার শিশুহাতের থেকে,
ঊষার গায়ে কে দিলরে মেঘের কালি মেখে?
কোথায় আমার রাজার কুমার! শুয়ে মায়ের কোলে,
তোমার কি ঘুম ভাঙবে না এই শিশু-চোখের জলে।
শান্ত্রী সিপাই লয়ে এসো সপ্তা-ডিঙা করে,
আকাশ-বাতাস কেঁপে উঠুক জয়ডঙ্কার স্বরে।
ভাঙতে হবে বন্ধগলি, রুদ্ধ ঘরের দ্বার-
ভাঙতে হবে লক্ষযুগের অন্ধ কারাগার।
এমন নগর গড়বে তুমি সকল কোণেই তার,
সমান হয়ে উদাস বাতাস বইবে অনিবার।
চন্দ্র-রবির সোনার প্রদীপ জ্বলবে সবার ঘরে,
সকল ঘরের পূর্ণিমাদের হাসিমুখের তরে।
সেই আলো কেউ বন্ধ করে রাখতে যদি চায়,
তাহার সাথে যুদ্ধ মোদের সকল দুনিয়ায়!
পূর্ণিমা
Did you enjoy the the artible “পূর্ণিমা” from Jasimuddin on OZOFE.COM? Do you know anyone who could enjoy it as much as you do? If so, don't hesitate to share this post to them and your other beloved ones.
Leave a Reply