অসহ্যকে সহ্য করা-ই বিজ্ঞতা। অসহ্যকে সহ্য করা-ই ভালোবাসা।
বর আর বৌ দুজনেই ঘরের কোনে, নিভৃতে চোখের জল ফেলে। কেন? বরের অভিযোগ- বৌ-টা তার, কখনো একটু ভালোবেসে কথা বললো না। সারাদিন কেবল খ্যাঁক খ্যাঁক করছে। বৌয়েরও কিন্তু সেই একই অভিযোগ। এইভাবে চলতে চলতে একটা সময় আসে, যখন-
তারা কাছে,
অথচ অনেক দূরে।
একই ছাদের তলায় বাস
অথচ দুজনের হৃদয়ের ঠিকানা অন্য।
গল্পটা খুব চেনা নয় কি? মানুষের এই দুর্ভাগ্য কেন হয়? কখনো তা ভেবে দেখেছো?
মানুষ চোখ থেকেও অন্ধ। সে দেখে অথচ দেখে না। ব্যাপারটা কি রকম? শিশু, শিশুর মতো আচরণ করবে। তাই না? শিশুর আচরণ দুষ্টুমি। কিন্তু উন্মত্ত এক মায়ের চীৎকার- ‘আবার দুষ্টুমি! মেরে তোকে শেষ করে ফেলবো! ‘ শিশুর দুষ্টুমি চিরন্তন সত্য। একজন নারী তা ছোট বেলা থেকে দেখে আসছে। তবুও সেই নারী, শিশুর দুষ্টুমি গ্রহণ করতে পারে না। এই মায়ের উন্মত্ত আচরণ প্রমাণ করে- সে এই বাস্তব সত্য, দেখেও দেখেনি। শিখেও শিখি নি।
এইরকম সহস্র বাস্তব প্রাকৃতিক সত্য আমরা দেখেও দেখিনি। শিখেও শিখি নি। জেনেও জানি নি। বাস্তব বা প্রাকৃতিক সত্যকে, আমরা বারবার অস্বীকার করি বলেই, আমাদের জীবনে এতো যন্ত্রণা!
বৌ, বরের থেকে দূরে সরে যায়। কিশোরী বালিকা, তার বাবা মায়ের কাছেও, তার যন্ত্রণার কথা মন খুলে বলতে পারে না। অবশেষে সেই কিশোরী একদিন আত্মহত্যা করে।
প্রত্যেক মানুষ ভিন্ন। তাই তাদের চিন্তাধারা বিচারবুদ্ধি ভিন্ন। অন্যের আচরণ- আমার ইচ্ছে অনুযায়ী না হলেই। আমি তাকে অসহ্য বলে পরিত্যাগ করি। এই অসহিষ্ণুতাই- দাম্পত্য জীবনে কলহ আনে। সন্তানকে দূরে ঠেলে দেয়।
আবার এই অসহিষ্ণুতাই- রাজনৈতিক হানাহানির কারন। ধর্মে ধর্মে সংঘর্ষের কারন। আমার দলের বিরোধী দলের সদস্যকে, আমি খিস্তি খেউর করি। তাদরেকে পথে দেখলে, তাদের আমি মাথা ফাটিয়ে দিই। অন্য ধর্মের মানুষকে আমি ঘৃণা করি। তাদেরকে বিধর্মী বলে খিস্তি করি। ইত্যাদি।
কিন্তু প্রাকৃতিক সত্যটা কি? সত্যটা হলো, পৃথিবীর সাতশো কোটি লোকের- সাতশো কোটি রকমের চিন্তাধারা। সাতশো কোটি রকমের বিশ্বাস। সাতশো কোটি রকমের ধর্ম। অন্য একজন লোক, অন্য রকমের তো হবেই।
আমি যদি আমার দশ জন হিন্দু ভাইকে জিজ্ঞেস করি- ‘হিন্দু ধর্ম বলতে তুমি ঠিক কি বোঝো? ‘ আমি ১০০ ভাগ নিশ্চিৎ, আমি ঠিক দশ রকমের উত্তর পাবো। ব্যাপারটা ভাবো- আমার হিন্দু ভাইদের মধ্যেই চিন্তা ধারার এই তারতম্য। তাহলে অন্য ধর্মের মানুষের সঙ্গে আমাদের চিন্তা ধারণার তারতম্য তো হবেই। চিন্তাধারার মিল হয় না বলেই- তাকে আমি খিস্তি করবো? তাকে আমি খুন করবো?
লেখাপড়া শিখলেই- তুমি শিক্ষিত বা বিজ্ঞ নয়। আসল বিজ্ঞতা হলো- অসনীয়কে তুমি কতটা সহন করতে পারো।
© অরুণ মাজী
You May Also Like:
- You Are Just A Dream
- ঈশ্বরের ক জন শয্যা সঙ্গিনী? (On God And Belief)
- পাগলপনা এক জীবনদায়ী ওষুধ (Human Suffering)
- Man Cannot Live Without Madness
- আমারই কাপুরুষতায় (Amari-I Kapurushotay)
- আমি চাই রমণী দাঁতের দংশন (Ami Chai Romoni Danter Dongshon)
- আমি ভালো নেই (দ্বিতীয় খন্ড) (Ami Bhalo Nei – 2)
- নারী স্পর্শ (Nari Sporsho)
Leave a Reply