সেই অমলদা এখন আমার অমল। আমি এখন তার নগ্ন বুকে শুয়ে। অমলের হাসিতে আমার সংযমচ্যুতি ঘটলো। আমি আমার এক পা ওর উরু দুটোর মধ্যে রেখে অমলকে জড়িয়ে গাঢ় আর দীর্ঘ এক চুমু খেলাম।
ভাবি নি, আমার এই চুমু আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করবে। সহস্র সিংহের শক্তিতে অমল আমাকে বুকে চেপে ধরলো। অমলের আগ্নেয় দেহের প্রত্যেকটা চড়াই উৎরাই এখন স্পর্শ করেছে আমাকে। আমার রক্ত আবার নতুন করে ফুটতে শুরু করলো। শির দাঁড়ায় আমার লাভার স্রোত নতুন করে বইতে শুরু করলো। ঊহঃ ভাবতে পারি নি, এতো তৃষ্ণা আমার বুকে জমা! এতো জ্বলবার বাসনা আমার, আগ্নেয়গিরির সর্ব্বগ্রাসী আগ্নেয় ক্ষুধায়! এতো উদগ্র অভিপ্রায় আমার বৈশাখীর উন্মত্ত ঝঞ্ঝায় খড় কুটো হয়ে উড়ে যাওয়ার!
অমলকে আরও জোরে বুকে চাপতে গিয়ে বুঝলাম- দেহ আমার অবশ, বাহু আমার শিথিল। ক্ষুধার্ত সিংহের চোখে চোখ রেখে, অবশ হয়ে আসা সেই হরিণ শিশু আমি। মধ্য ত্রিশের এই যুবকের, উন্মত্ত যৌবন চিতায়- পুনরায় আমি আত্মাহুতি দেবো বলে…..
অমলের হৃৎপিণ্ডে এখন মহা প্রলয়ের দুন্দুভি। চোখে তার দাবাগ্নির সর্ব্বগ্রাসী ক্ষুধা। বুকে তার ভূকম্পের আলোড়ন। উরুতে আগামী উগ্ন্যুত্পাতের ভয়ঙ্কর ধৈর্য্যচ্যুতি।শ্বাস ওর, আরও ঘন আর দীর্ঘ হতে লাগলো। আমাকে ওর বুকের থেকে ছুঁড়ে ফেলে, বিছানায় চিৎ হয়ে শুইয়ে দিয়ে, আমার বুকের উপর হিংস্র ভাবে চড়ে বসলো ও। এর পর আমার নগ্ন দেহের উপর সাঁতার দেবে বলে…
এক ঘন্টা পর, আমরা দুজনেই ভীষণ ক্লান্ত আর বিধ্বস্ত। ওর পাশে শুয়ে, ওর বুকে নখ দিয়ে আঁচড় কাটতে কাটতে নজর করলাম- ও সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে। আমার চোখে চোখ রেখে, ঠোঁটের ডান কোনে টোল এঁকে হাসলো অমল। বললো-
”জানতাম না, এতোটা সাহসী তুমি প্রীতি! ”
সাহসী হওয়া কি অন্যায়?
“আলবৎ না। একশোবার না। বরং উল্টোটা। আমি চাই- নারী পুরুষ ইত্যাদি সব মানুষই, ভীষণই সাহসী আর উন্মুক্ত হোক। যে জৈবিক ক্ষুধার মাধ্যমে মানুষের জন্ম, সেই চির জ্বাজল্যমান জৈবিক খিদেকে লুকানোর চেষ্টা মানুষের কেবল মূর্খামি নয়, ভীষণই অন্যায়ও। নারী আগুন, পুরুষ শুকনো কাঠ। তাদের স্পর্শে দাবাগ্নি না জ্বলাই অস্বাভাবিক। তাই না? “
আমিও তাই মনে করি। কিন্তু দেশের প্রথা আর সংস্কার তো তা ভাবতে দেয় না।
“প্রথার ক্রীতদাস তুমি হবে কেন? “
ক্রীতদাস হতে চাই না বলেই তো আজ আমি অমল মুখার্জীর বুকে শুয়ে। পুরুষ তার কামনার নিবৃত্ত ঘটাতে পারবে তো নারী পারবে না কেন?
“একদম ঠিক প্রশ্ন। নারী পুরুষ বিভেদের বেড়াজালে চিরবন্দী থাকবে কেন? নারী পুরুষকে বিভেদের চির কয়েদখানায় বন্দী করেছে কে? সমাজের সংস্কার। কে তৈরী করেছে এই সংস্কার? কোন বৈজ্ঞানিক যুক্তিতে? এই বিভেদ সংস্কার মাতৃ জাতিকে অসহ্য নির্যাতন করছে বুঝেও, কেন আমরা সেই বিভেদ মেনে নেবো? আজ আমরা চাঁদে যাচ্ছি। মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছি। আর সেই বিজ্ঞান আর যুক্তিবোধের দিনে, আমরা বৈষম্যমূলক আচরণ মেনে নেবো? “
আমি চুপ করে তাকিয়ে। তন্ময় হয়ে অমলকে দেখছি আমি। কোন কিছু আলোচনা করলে, অমলের চোখ থেকে সূর্যের জ্যোতি বের হয়।
এই সেই অমল মুখার্জী। MIT গ্রাজুয়েট। স্ট্যানফোর্ড গ্রাজুয়েট। যেমন সে পারে কম্পিউটারের কঠিনতম সমস্যা সমাধান করতে, তেমনই পারে বেদ ঊপনিষদের দর্শন, ঘন্টার পর ঘন্টা আলোচনা করতে। আর তেমনই সে পারে সাহিত্য সংস্কৃতি সংগীত নিয়ে যেকোন দুরূহ তত্ত্ব আলোচনা করতে।
কিসে বেশি আকৃষ্ট আমি? অমলের নগ্ন দেহের সৌন্দর্য্যে? অমলের নখের আঁকিবুঁকি জাদুতে? অমলের আধুনিক শিক্ষায়? অথবা অমলের বৈজ্ঞানিক বিল্পবী চেতনায়?
নাহঃ জানি না আমি। হয়তো কোনদিনও জানবো না আমি। শুধু জানি- অমল মুখার্জীকে দেখলে, দেহে আমার ভূকম্প শুরু হয়। মনে আমার কাল বৈশাখী ঝড় বয়ে যায়।
ওকে যেদিন প্রথম দেখেছিলাম, সেদিনই হয়তো আমি ওর বিছানায় শুতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কেন? আমি কি দুশ্চরিত্রা? আমি কি সস্তা? তবে এতো পুরুষ এতো বছর ধরে আমার পিছু পিছু ঘুরেও, আমার নাগাল কোনদিন পায় নি কেন?
অমল মুখার্জীর মতো মানুষরা প্রতিদিন জন্মায় না।মানুষের “পুণ্য ভাণ্ডারে” যেদিন পূর্ণিমা জাগ্রত হয়, সেদিনই কেবল অমল মুখার্জীর মতো মানুষরা এই পৃথিবীতে জন্মায়।
(চেতনায় বিপ্লবের জন্য তৈরী হও তোমরা। অরুণ মাজীর আগামী উপন্যাসের অংশ।)
© অরুণ মাজী
You May Also Like:
- You Are Just A Dream
- ঈশ্বরের ক জন শয্যা সঙ্গিনী? (On God And Belief)
- পাগলপনা এক জীবনদায়ী ওষুধ (Human Suffering)
- Man Cannot Live Without Madness
- আমারই কাপুরুষতায় (Amari-I Kapurushotay)
- আমি চাই রমণী দাঁতের দংশন (Ami Chai Romoni Danter Dongshon)
- আমি ভালো নেই (দ্বিতীয় খন্ড) (Ami Bhalo Nei – 2)
- নারী স্পর্শ (Nari Sporsho)
Leave a Reply